পুরীতে যাচ্ছে দীপুদা৷ তার আসল নাম হল দ্বৈপায়ন বসু৷ বিদ্যায় তিনি ভাষাবিদ, পেশায় গোয়েন্দা এবং নেশা সিগারেট ও ভ্রমণ। তাঁর ছোট্টবেলা থেকেই তিনি ফেলুদা ব্যোমকেশ বক্সীর অনুরাগী। এরকম কিছু বই পড়ার জন্য তিনি পড়াশোনা করলেন বাংলা ভাষা নিয়ে।কিন্তু শেষে তিনি এই পেশাই বেছে নিলেন। দীপুদার সঙ্গী আমি এবং কবি গরুড় ওরফে গজেশ রায়। তাঁর লেখনীর দ্বারা কবিতার মাধ্যমে তার শত্রুদের শক্তিশালী ব্যাঙ্গাস্ত্র প্রয়োগ করেন বলেই কবি সমাজে তিনি এই নামে খ্যাত।রাত সাড়ে আটটায় আমাদের ট্রেন দীপুদা আমি ও গরুড় স্টেশনে পৌছালাম তখন আটটা। কাল রথযাত্রা। তাই কাতারে কাতারে লোক পুরীর দিকে রওনা দিচ্ছে। ট্রেন ছাড়লো সাড়ে আটটায়।কিছুক্ষণ জমিয়ে আড্ডা দিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম।ভোর বেলা পাঁচটায় পুরীর স্টেশনে পৌঁছলাম। রাস্তায় এখন থেকেই পুণ্যার্থীদের দের ঢল দেখার মত। আমরা হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মন্দিরে আমাদের পান্ডা জগন্নাথ সিংহারীর সঙ্গে দেখা করলাম। দারু বিগ্রহ বেলা এগারোটার সময় রথ স্থাপন করা হলো এবং রথগুলি একে একে গুণ্ডিচা মন্দিরের দিকে যাত্রা শুরু করল। রথ পৌঁছলো যখন তখন বাজে বিকাল সাড়ে চারটে। এখন থেকে ৮ দিন এখানেই পুজো হবে। তারপর ফিরে সোনাবেশ। রথের পর চতুর্থ দিন জগন্নাথ দেবের সোনার হাত ও সুদর্শন চক্র মন্দির কর্তৃপক্ষ খুঁজে পেল না। হাতে সময় আর চার দিন। বহু মানুষ বিগ্রহের এই বেশ দেখে পুণ্যার্জন করতে চায়৷ পুরী থানার ওসি দীপুদার কথা জানতে পেরে দীপুদাকে এগুলি উদ্ধার করা এবং দোষী শনাক্তকরণের দায়িত্ব দিলেন। রত্ন ভান্ডারের সমস্ত কর্মচারীর নাম দীপুদা জোগাড় করলেন এবং সবার বাড়ির লোকেদের তদন্ত করলেন। আমি দীপুদার অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়ার সুবাদে কয়েকজনকে আমি তদন্ত করে তাদের কথাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নোট করলাম। এদের মধ্যে দীপুদা একটি হতদরিদ্র কর্মচারীর কথা জানতে পারল এবং তার বাড়ির লোকের কাছ থেকে তার অসৎ গুণগুলির ব্যাপারে জানতে পারল। দীপুদা তার একটি ঘরে ছোট্ট রেকর্ডার চালু করে রেখে এল এবং পরের দিন আবার আসবে বলে জানিয়ে গেল। পরের দিন টেপে রেকর্ডার থেকে দোষী সনাক্ত করতে পারলেও বস্তুর অবস্থান বুঝতে পারল না দীপুদা। কিন্তু দোষীর নাম ও ঠিকানা সব ওসিকে পাঠিয়ে দিল। ওসি পুলিশে তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারল যে, সে তা বাড়িতে নিয়ে যায়নি, বস্তুগুলি গর্ভগৃহে জগন্নাথ দেবের বেদীর পিছনে সে রেখেছে, তার বলা অবস্থান অনুযায়ী সব বস্তু ফেরত পাওয়া গেল। দীপুদার এই প্রথম সফলতা লাভের সুবাদে আমাদের খাজা দিয়ে মিষ্টিমুখ হল। রাতে ট্রেন, কাল বাড়ি। এভাবেই শেষ হল আমাদের ভ্রমণ।
কিংজিৎ হাইত